জাপানে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতেন সুলতানা পারভিন। ১০ মাস আগে বিয়ে হয় জাপান প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে। বিয়ের পর স্বামীকে পেয়ে হাসিমুখে সংসার শুরু করেছিলেন তিনি। স্ত্রীর ভিসার সব কার্যক্রম শেষ। শুধুই আকাশে উড়াল দেওয়ার অপেক্ষা। ঠিক তখনই নেমে আসে অমানিশার ছায়া। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে এআই দিয়ে বানানো একটি ভুয়া ভিডিও কেড়ে নেয় তার সব স্বপ্ন, কেড়ে নেয় তার জীবন। ভিডিও নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংসার ও সমাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সুলতানা। গত রবিবার শেষ হয় তার স্বপ্নের পথচলা। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভিন ওরফে সোহা (২৩)। অনিকের বোনজামাই পর্তুগাল প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল এ বিয়ে মেনে নেননি। অভিযোগ, তিনিই পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সুলতানার ছবি দিয়ে তৈরি করেন একটি আপত্তিকর ভিডিও। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেন একটি ফেক আইডি থেকে। প্রথমে সুলতানাকে এবং পরে তার স্বামী অনিককেও পাঠানো হয় সেই ভিডিও।
এ ভিডিওর কারণে সংসারে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি, মানসিক নির্যাতন। পরে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া এবং এর পেছনে ছিলেন নাহিন শেখ। তবে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আত্মহত্যার আগে সুলতানা পারভিন একটি তিন পাতার সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে তিনি পর্তুগাল প্রবাসী নাহিন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এবং ন্যায়বিচারের আবেদন জানান।
সুলতানার মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে তারা শেষ করে দিয়েছে- এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। সুলতানার স্বামী আশরাফুল ইসলাম অনিক ভিডিওকলে সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সব কাগজপত্র ঠিক করে তাকে জাপানে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বোনজামাই মেনে নেনি। সে পরিকল্পনা করেই এসব করেছে। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব, এ ঘটনার বিচার চাই।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী আকবর বলেন, এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আজকালের মধ্যে মামলা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।