জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা (মিস কেস) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক। গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’ শিরোনামে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।
সভায় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাইমুম রেজা, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হব এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সভায় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিমের উপস্থাপন করা অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়য়েছে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টি। চলমান তদন্ত কার্যক্রম ৩৯টির। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে ২২টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ১৪১ জন। তাদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন ৮৭ জন। ১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত সামরিক কর্মকর্তা নয়জন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন মামলা চারটি। এর মধ্যে গণ অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে। প্রসিকিউটর তামিম বলেন, এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে। ভিডিও অডিও পর্যালোচনা ও জিও লোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় জানায়, গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।