আল কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওমা খালাকতুন জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়্যাবুদুন’। অর্থ- ‘আমি জিন ও ইনসান (মানুষ) সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।’ সুরা জারিয়াত আয়াত ৫৬। এ ইবাদতের দুটি ভাগ। একটি অবশ্যপালনীয় ফরজ আর দ্বিতীয়টি নফল বা অতিরিক্ত। রসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।
যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সুন্দরভাবে দিতে পারবে তার পরবর্তী হিসাব সহজ হয়ে যাবে। সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয়, দুনিয়ার সব ইবাদতের মধ্যে ইমানের পর নামাজের গুরুত্ব সর্বাধিক। তাই নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো নফল নামাজ। আর নফল নামাজের মধ্যে সর্বোত্তম হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।
নফল ইবাদত যত ছোটই হোক, তা যদি নিয়মিত করা এবং অভ্যাসে পরিণত হয় তখন তার অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহতায়ালা বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম ফরজ নামাজের হিসাব নেবেন। যদি ফরজ পরিপূর্ণ ও ঠিক থাকে তখন সেই বান্দা সফলকাম হবে এবং দোজখের আজাব থেকে মুক্তি পাবে। আর যদি তার ফরজে কোনো ঘাটতি থাকে তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না। যদি থাকে তবে তা দিয়ে তার ফরজের ঘাটতি মিটিয়ে দাও।’ তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ি।
হাদিসটি থেকে এটা স্পষ্ট হলো পরকালের মুক্তিতে এ ইবাদতের কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাইলেই যে নফল ইবাদতগুলো প্রতিদিন করতে পারি তা হলো সাধ্যমতো নফল নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, কোরআন পড়া, জাকাত আদায় করা, তসবিহ পড়া, জিকির করা, আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করা, পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, যে কোনো সৎ ও উত্তম কাজ করা, এমনকি মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা ও মিষ্টি ভাষায় কথা বলাও নফল ইবাদত।
মানুষমাত্রই ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ফরজ ও ওয়াজিবের ভুলগুলো পরিশুদ্ধ করার জন্য নফল ইবাদতের বিকল্প নেই। সুতরাং ফরজ ও ওয়াজিবের ঘাটতি পূরণে আমাদের সবাইকে নফল ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।
মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নফল ইবাদত দ্বারা আল্লাহর দরবারে তাঁর বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নফল ইবাদত দ্বারা বান্দার সগিরা গুনাহ মাফ হয়। বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে ও তাঁর প্রিয় বান্দা হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সচেষ্ট হয়। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন আল কোরআনে। কী সেই পুরস্কার?
আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পিঠ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা নিশুতি রাতে আজাবের ভয়ে এবং জান্নাত লাভের আশায় আমাকে ডাকে এবং তাদের আমি যা দিয়েছি (রিজিক) তা থেকে আমার পথে ব্যয় করে। তারা জানে না তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে তাদের চোখের শীতলতার কী বিনিময় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’ সুরা আস সাজদা আয়াত ১৬-১৭।
সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও পরকালের মুক্তির জন্য ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অতিরিক্ত নফল ইবাদতের প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া একান্ত কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, ফরজ ও ওয়াজিবে যে ঘাটতি থেকে যায় তা একমাত্র নফল ইবাদত দ্বারাই পূরণ করা সম্ভব। তাই আমাদের সবারই উচিত ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতের প্রতি জোর দেওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর