মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত কেন? মূল রহস্য তো আল্লাহই জানেন। কিন্তু আমার কাছে একটা রহস্য এই মনে হয় যে, দিবসের যেমন সকাল, দুপুর, বিকাল এই তিনটা কাল শেষে সন্ধ্যা আসে তেমনি আমারও তিনটা কাল শেষে জীবনে সন্ধ্যা শুরু হবে- এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই বোধহয় আল্লাহ মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত ফরজ করেছেন। অর্থাৎ তুমি গরিব হও, ধনী বা মুসাফির হও, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হও, দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি বা সাবেক রাষ্ট্রপতি যাই হও তোমার জীবনের সবকাল শেষ হওয়ার পর মৃত্যুবরণ তোমাকে করতেই হবে। আল্লাহপাকের সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো- 'যখন মৃত্যুর নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন সামান্য আগ-পিছ হবে না।' পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই মৃত্যুকে এক সেকেন্ড আগে বা পরে নিয়ে যাবে। ১২টা এক মিনিটে ফাঁসি হবে, তো কেউ এক মিনিট আগে বা পরে করতে পারবে না। আমাদের অন্তরে কোনো প্রশ্ন জাগ্রত হয় না। মুসলমানের অন্তরে এমন প্রশ্ন না আসাই উচিত। কিন্তু কিছু মুসলমান আছে যারা প্রশ্ন করে যে, হুজুর! একজনকে ফাঁসি দিচ্ছে ১২টা এক মিনিটের সময়; এটা তো মানুষের সিদ্ধান্ত, আল্লাহর সিদ্ধান্ত তো না। এদেরই একজনকে আমি বললাম, আমি তো এটার মধ্যে আল্লাহর সিদ্ধান্তই দেখতে পাচ্ছি। সে জিজ্ঞেস করল, সেটা কীভাবে হুজুর? আমি বললাম, তর্ক যদি না করেন তাহলে আমি একটা কথা বলি। শুনুন আমি যা বলি আপনি তা বোঝেন না। কারণ আপনি যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ভাবেন আমি সে বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়ে ভাবি না। আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিচ্ছি যে, এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। এ জন্যই ১২টা না করে ১২টা এক মিনিটে করা হয়েছে। এটাই যে আল্লাহর সিদ্ধান্ত না সে কথা বলি কী করে? জল্লাদ তার ফাঁসি বেলা ১টায় করতে পারত, বিকাল ৪টায় করতে পারত কিংবা রাতের শুরু ভাগে করতে পারত- কিন্তু না, সে করেছে ১২টা এক মিনিটে। এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। জজের অন্তরে আল্লাহ এই সময়ের কথাই ঢেলেছেন। অতএব জল্লাদ তাই করেছে যা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। আপনি যেটা বলেছেন এটার ভিত্তি হলো আপনার জ্ঞান। আর আমার বক্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে, আল্লাহ পাকের কথা। তিনি বলেছেন, বিশ্বে যা কিছু হয় সব আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়। আমি তাকে আরও বললাম আপনি যে নিজের ভিতরে এই জিজ্ঞাসা পোষণ করছেন, এটা বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরতার কারণে হয়েছে। আমি যেটা বলেছি এটা আমার বুদ্ধি-যুক্তির দ্বারা বলিনি, বরং আমি একজনকে চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছি। তিনি হলেন মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মুসলমানের অকাট্য বিশ্বাস হলো, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটা বলেন সেটাই সঠিক, যদিও আমার বুঝে না আসে। ব্যক্তিজীবন, সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে কোনো প্রসঙ্গে তিনি যেটা বলেছেন সেটাই মান্য। যদি তার রহস্য আমার বুঝে আসে তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব যে, আল্লাহ! তুমি আমাকে বুঝিয়েছ, তোমার শোকর। আর যদি বুঝে না আসে তবুও মনে করতে হবে যে, এটা নবীর কথা। অতএব লঙ্ঘন করার কোনো সুযোগ নেই। মুসলমানের মৌলিক বিশ্বাস হলো, আল্লাহ যা বলেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল নেই।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।