মুসলমানদের তাবুক অভিযান নবম শতাব্দীর একটি স্মরণীয় ঘটনা। রোম সম্রাটরা বহু আগে থেকেই আরব দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন। হোদায়বিয়ার সন্ধির পর বাইজানটাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে ইসলামের বাণীসহ দূত প্রেরিত হয়েছিল। হেরাক্লিয়াস মুসলিম দূতকে পরম সমাদরে গ্রহণ করলেও আরবদেশ জয়ের আশা পরিত্যাগ করতে পারেননি। মোহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মক্কা, তায়িফ ও হুনায়ুনে ইসলামের বিজয়বার্তা ঘোষিত হলে তিনি মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঈর্ষা পোষণ করতে থাকেন। মুতার যুদ্ধে মুসলমানদের কাছে খ্রিস্টানরা পরাজিত হলে তার ঈর্ষাবহ্নি শতগুণ বৃদ্ধি পেল। মুসলমানদের কাছে কয়েকবার পরাজিত আরবের ইহুদিদের উসকানি রোম সম্রাটের প্রতিশোধস্পৃহাকে তীব্রতর করে তুলল। তিনি সমরসজ্জার আয়োজন করলেন। লাখম, জুজান, গ্যাসান প্রভৃতি গোত্র রোমানদের সঙ্গে যোগদান করল। প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে রোম সম্রাট মদিনা আক্রমণের জন্য অগ্রসর হলেন (নভেম্বর, ৬৩০ খ্রি.)।
রোম সম্রাটের এ আক্রমণের পশ্চাতে যে সব কারণ ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন, তা হলো : (১) নবম হিজরির প্রারম্ভে কোনো কোনো মুসলিম বিদ্বেষী লোক রোম সম্রাটকে জানায় যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আর ইহজগতে নেই। (২) আরবে তখন অজন্মা, দুর্ভিক্ষ ও বিশৃঙ্খলা বিধ্যমান। সুতরাং এ সুযোগে উদীয়মান মুসলিম শক্তিকে পরাস্ত করে আরবদেশ অধিকার করা খুব সহজ হবে বলে রোম সম্রাট মনে করেছিলেন। তদনুসারে আরবদেশ অধিকার করার জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
হেরাক্লিয়াসের সমরাভিয়ানের কথা শুনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা যুদ্ধে প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। মক্কা জয়ের পর ইসলামের বশ্যতা স্বীকারকারী বিভিন্ন গোত্র দলে দলে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল। প্রায় ১০ হাজার অশ্বারোহীসহ মোট ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে নবী করিম (সা.) রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সদলবলে তাবুক অভিমুখে রওনা হলেন।
সম্ভবত সিরিয়াগামী বাণিজ্যপথের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মহানবী (সা.) তাবুক অভিযানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। এর সঙ্গে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মহানবীর (সা.) মুতা অভিযানের কারণ উল্লেখযোগ্য।
রোমান সৈনিকরা মুসলমানদের ব্যাপক সমরায়োজনের সংবাদ পেয়ে পশ্চাৎপসারণ করল। ফলে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হলো না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে মদিনায় ফিরে এলেন। ইসলামের ইতিহাসে তাবুক অভিযান 'গাজওয়াতুল ওসরা' বা কষ্টের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল গ্রীষ্মকালে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড সূর্যকিরণ ও অসহ্য পানিকষ্টের মধ্যদিয়ে এ অভিযান মুসলমানদের সুদীর্ঘ বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছিল। তাই একে উল্লিখিত নামে অভিহিত করা হয়েছে। এটাই মহানবী (সা.)-এর জীবনের সর্বশেষ অভিযান। এ অভিযানে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কথিত আছে যে, তিনি সর্বমোট ২৭টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তন্মধ্যে তাবুক ছাড়া আরও আটটি অভিযানে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাবুক অভিযান হতে ফিরে আসার পর দেশ-বিদেশ হতে বহু লোক এসে হজরতের কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। যে আরবরা একদিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বশ্যতা স্বীকার করতে অস্বীকার করেছিল আজ তারা তার পদপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ল। -শাকিল জাহান