প্রিয়তম নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবি হজরত মু'য়াজ ইবনে জাবালকে দামেস্কের গভর্নর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল তিনি সেখানে ছিলেন। নবীজীর ইন্তেকালের মুহূর্তেও তিনি সেখানেই ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিকী রাযিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালেও তিনি সেখানে দায়িত্ব পালনে ব্রতী থাকেন। খলিফাতুল মুসলিমীন হজরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্মস্থল পরিবর্তন করে তাকে মদিনায় এনেছিলেন। মদিনায় আসার পর তিনি নবীজীর রওজা মোবারক জিয়ারতের পর বলেছেন, আমার জন্য মদিনায় থাকা সম্ভব নয়। নবীজী নেই, তাই তার বিরহ-ব্যথা আমার সহ্য হচ্ছে না, আমি নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, এ বলে তিনি দামেস্কে চলে যান। সেখানে তার ওফাত হয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। নবীপ্রেমিক সাহাবি হজরত মু'য়াজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু দামেস্কের জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। সেখানে তিনি মজলিস করতেন। বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত আবু ইদ্রিস খাওলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি একদিন দামেস্কের জামে মসজিদে গিয়ে দেখতে পেলাম, এক বৃদ্ধ লোক বয়ান করছেন, আর তার চতুর্দিকে অসংখ্য লোক বসে বয়ান শুনছেন। বহু চেষ্টা করেও আমি তার কাছে যেতে সক্ষম হলাম না। অতঃপর আমি এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, অসংখ্য শ্রোতা পরিবেষ্টিত এ বৃদ্ধ লোকটি কে? তিনি জবাবে বললেন, তিনি হলেন, মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবি হজরত মু'য়াজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু।
মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইমান অবস্থায় দেখার বা তার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য যাদের হয়েছে এবং এরপর যাদের মৃত্যু ইমান অবস্থায় হয়েছে, তাদের 'সাহাবি' বলা হয়। আর যারা ইমান অবস্থায় কোনো সাহাবিকে দেখেছেন এবং মৃত্যু ইমানের ওপর হয়েছে, তাদের 'তাবেয়ি' বলা হয়। আবু ইদ্রিস খাওলানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, হজরত মু'য়াজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ পাব কীভাবে? লোকটি বলল, আপনি যদি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, তাহলে আপনাকে জোহরের প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে উপস্থিত থাকতে হবে। কারণ তিনি জোহরের প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে আসেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। নামাজে দাঁড়ানোর আগেই সাক্ষাৎ করতে হবে, অন্যথায় সেদিন আর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব নয়। হজরত আবু ইদ্রিস খাওলানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পরের দিন আমি হজরত মু'য়াজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এসে দেখি, তিনি আমার আসার আগেই মসজিদে পৌঁছে নামাজে দাঁড়িয়ে গেছেন। ফলে আমি আর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলতে পারিনি। কিন্তু তাঁর কাছে বসার সুযোগ পেয়েছি। আবু ইদ্রিস খাওলানি বলেন, মুয়াজ্জিন ইকামত দেওয়া পর্যন্ত তিনি নামাজে মশগুল ছিলেন। নামাজান্তেই আমি তার সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বললাম, 'আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি।'
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।