মানবাধিকার আজকের এই আধুনিক যুগের একটি অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। যে সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, সে সমাজ আদৌ সভ্য সমাজের অংশ কিনা এ প্রশ্নও এ যুগে জোরেশোরে উচ্চারিত। ইসলাম সেই ১৪শ বছর আগে যখন সমকালীন সমাজে মানবাধিকারের ধ্যান-ধারণার কোনো অস্তিত্বই ছিল না, তখন এ ধারণাকে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। 'রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমান তারাই যাদের মুখ এবং হাত দ্বারা কেউ কষ্ট না পায়।' (বোখারি)
ইসলামে মানবাধিকার নীতির প্রতিফলন ঘটেছে যে বিশ্বাস থেকে সে বিশ্বাস হলো দুনিয়ার সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ দুনিয়ার প্রথম মানব-মানবী সৃষ্টি করেছিলেন আদম ও হাওয়াকে। সব মানুষ তাদের বংশধর। সেহেতু এক মানুষ অপর মানুষের স্বজন। জাতি, ভাষা, বংশ ও অনান্য ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও সব মানুষ সমান। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতের ১৩২ নম্বর আয়াতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে_ 'হে মানুষ! আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হইতে, পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করিয়াছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাহাতে তোমরা একে অপরের সহিত পরিচিত হইতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।'
পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা অনুসারে আল্লাহর কাছে সম্ভ্রান্ত বলে বিবেচিত সেই মানুষ যে পরহেজগার। কে কোন বংশের লোক, কোন পদমর্যাদার অধিকারী, কে ধনবান ইত্যাদি আল্লাহর কাছে বিবেচ্য নয়।
মানবাধিকার অর্থাৎ অপর মানুষের অধিকারের প্রতি ইসলাম কতটা যত্নবান তা বিদায় হজে প্রদত্ত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐতিহাসিক ভাষণে স্পষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় কোনো আরবের অনারবের ওপর, কোনো অনারবের আরবের ওপর এবং কোনো শ্বেতাঙ্গের কৃষ্ণাঙ্গের ওপর, কোনো কৃষ্ণাঙ্গের শ্ব্বেতাঙ্গের ওপর পরহেজগারী ব্যতীত শ্রেষ্ঠত্ব নেই। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী)
অপরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও অপধারণা মানবাধিকার লঙ্ঘনে মদদ জোগায়। ইসলামে এই ঘৃণ্য অভ্যাস থেকে দূরে থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন_ তোমরা কুধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কারণ কুধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা, অন্যের দোষ আবিষ্কার করো না, অন্যের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করো না। কারও সঙ্গে হিংসাপরায়ণ হয়ো না এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতার মনোভাব রেখো না। হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা পরস্পরের ভাই হয়ে যাও। (বোখারি মুসলিম, আবু দাউদ)
লেখক : খতিব, আল-আমিন জামে মসজিদ, খুলনা।