যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অবৈধভাবে রমরমিয়ে চলছিল এক বিলাসবহুল যৌনপল্লি। আর তার তদন্তে নেমে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী অনুরাগ বাজপেয়ীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। অবৈধ ওই যৌনপল্লিতে যাতায়াতের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, প্রযুক্তির মাধ্যমে পানিশোধনের কাজ করা সংস্থা ‘গ্রেডিয়েন্ট’-এর সিইও তথা সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অনুরাগ। আমেরিকার বুকে পানিশোধন শিল্পে অন্যতম বড় নাম তিনি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘দ্য কেমব্রিজ ব্রথেল হিয়ারিংস’ নামে পরিচিত ওই মামলায় ৩০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট পুরুষের নাম জড়িয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট অবৈধ ভাবে চলা যৌনপল্লিতে মোটা অর্থের বিনিময়ে যৌনতা কেনার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কী এই ‘কেমব্রিজ ব্রথেল কেস’?
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর মতে, ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে অবৈধ ভাবে চলা ওই যৌনপল্লিতে কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, সরকারি কর্তা, চিকিৎসক এবং আইনজীবী-সহ অভিজাত গ্রাহকদের যৌন পরিষেবা দেওয়া হত। তবে ওই যৌন পরিষেবা পাওয়ার ঝামেলাও কম ছিল না। এর জন্য গ্রাহকদের সরকারি পরিচয়পত্র, অফিসের ব্যাজ এবং এমনকি ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও জমা রাখতে হত।
যৌন পরিষেবা পাওয়ার জন্য ঘণ্টা প্রতি ৬০০ ডলার (প্রায় ৫০,০০০ টাকা) পর্যন্ত দিতে হত বলে জানা গিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী এবং তদন্তকারীদের অভিযোগ, যে মহিলারা যৌন পরিষেবা দিতেন, তাঁদের অনেককেই এশিয়া থেকে আমেরিকায় পাচার করা হয়েছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনুরাগ-সহ অনেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, চলতে থাকা আইনি প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হল গ্রাহকদের তালিকা এবং তাঁদের যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা।
জানা যায়, এই মামলায় অনুরাগ গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০২৫ সালের শুরুতেই। বস্টন এলাকায় পুলিশ পরিচালিত একটি স্টিং অপারেশনের সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে তখন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত আদালতের নথিতে অনুরাগের নাম উঠে এসেছে। অনুরাগের পাশাপাশি আরও কয়েক জন সিইও-র নাম রয়েছে ওই নথিতে। তবে সবচেয়ে হইচই পড়েছে অনুরাগকে নিয়ে।
‘কেমব্রিজ ব্রথেল কেস’ প্রকাশ্যে আসার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী অনুরাগকে নিয়ে সমাজমাধ্যমেও হইচই পড়েছে। তাঁকে নিয়ে বিস্তারিত জানতে ইন্টারনেটে খোঁজখবর শুরু করেছেন নেটিজেনরা।
ব্যবসায়ী হিসাবেও অনুরাগ সফল। তাঁর নেতৃত্বে ‘গ্র্যাডিয়েন্ট’ এখন শত কোটি ডলারের সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ২৫টিরও বেশি দেশে কাজ করছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাপী আড়াই হাজারেরও বেশি কার্যালয় রয়েছে তাদের। সেমিকন্ডাক্টর, ফার্মাসিউটিক্যালস, খনিজ শিল্প এবং খাদ্য ও পানীয়ের মতো শিল্পগুলিতে বিশুদ্ধ জলশোধনের পরিষেবা দেয় ‘গ্র্যাডিয়েন্ট’।
অনুরাগের জন্ম ভারতে। অনুরাগের ‘লিঙ্কডইন’ প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি লখনউয়ের লা মার্টিনিয়ার থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। ২০০৬ সালে মিসৌরি-কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন অনুরাগ। এর পরে এমআইটিতে ভর্তি হন। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
সেই অনুরাগই যৌনকাণ্ডে অভিযুক্ত। ক্রমবর্ধমান সমালোচনা এবং বিতর্কের আবহে ‘গ্র্যাডিয়েন্ট’ সংস্থা থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। যদিও প্রকাশ্যে সিইও-র সমর্থনেই দাঁড়িয়েছে সংস্থা।
একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ‘গ্র্যাডিয়েন্ট’ বলেছে, ‘‘আমরা বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি এবং আত্মবিশ্বাসী যে, যথাসময়ে অনুকূল ভাবে সমস্যার সমাধান হবে। গ্র্যাডিয়েন্ট প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে উৎকর্ষ অর্জন এবং সমাজের সকল স্তরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাবে।’’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল