ভারতের ওড়িশায় গত কয়েক দিনে দু’জন রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। একই হোটেলে পরপর দুই বিদেশির মৃত্যু আলোড়ন তৈরি করেছে। দুটি ঘটনারই তদন্ত শুরু করেছে দেশটির পুলিশ।
গত রবিবার ওড়িশার রায়গড়া জেলার একটি হোটেলের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পাভেল অ্যান্থভ নামে এক রুশ নাগরিকের মরদেহ। হোটেলের চতুর্থ তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার।
পাভেল রাশিয়ার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজের ৬৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ভারতে ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন।
পাভেলের মৃত্যুর ঠিক তিন দিন আগে ওড়িশার ওই হোটেলেই মৃত্যু হয় তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া আরেক রুশ নাগরিকের। বৃহস্পতিবার হোটেলের ঘরে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় ভ্লাদিমির বিদেনভকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই বিদেনভের মৃত্যু হয়েছে। তার ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছিল। সফরসঙ্গীর এমন আচমকা মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে পাভেলও আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
রাশিয়ায় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন পাভেল। ২০১৯ সালে দেশের সবচেয়ে বেশি আয় করা জনপ্রতিনিধির তালিকায় নাম ছিল তার। সরকারি হিসাবে ওই বছর পাভেলের আয় ছিল ৯.৯৭ বিলিয়ন রুবল, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। তবে চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন এই রুশ রাজনীতিক।
ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন পাভেল। চলতি বছরের জুন মাসে ইউক্রেনে একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, “ইউক্রেনে যা হচ্ছে, তাকে সন্ত্রাসবাদ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।”
পাভেলের এই মন্তব্য ভাল চোখে দেখেননি পুতিন। সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই পোস্টের পরই চার দিক থেকে পাভেলের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। চাপের মুখে মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন পাভেল।
মন্তব্য প্রত্যাহার করে পাভেল জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের একনিষ্ঠ সমর্থক। তার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটিকেও দায়ী করেছিলেন পাভেল।
ইতিহাস বলছে, রুশ রাজনীতিতে পুতিন বিরোধীদের পরিণতি খুব একটা ভাল হয়নি কখনওই। প্রায় প্রত্যেককেই রহস্যজনকভাবে মরতে হয়েছে। ভারতে ঘুরতে এসে পাভেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু তাই নতুন করে উস্কে দিয়েছে বিতর্ক।
গত কয়েক বছরে রাশিয়ার বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ কিংবা রাজনৈতিক সমালোচকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনাচক্রে তারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনওভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন।
পাভেলের মতোই আচমকা মৃত্যু এসে কড়া নেড়েছিল সেই সমস্ত পুতিন সমালোচকের দ্বারে। তারা কেউ বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন, বা লাফ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাভিল ম্যাগানভ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় হাসপাতালের জানলা থেকে নীচে পড়ে গিয়ে। পুতিনের সমালোচনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনিও।
এরপর পুতিনের সমালোচনাকারী হিসেবে পরিচিত আরেক রুশ কূটনীতিক ড্যান রাপোপর্টের মৃত্যু হয় একইভাবে। ওয়াশিংটনের একটি বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর কিছু দিন আগেই পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন।
কেন বারবার পুতিনের সমালোচনাকারীদের বহুতল ভবন থেকে পড়ে মরতে হচ্ছে। এ কী নিছক কাকতালীয় ঘটনা, না কি প্রত্যেকটি মৃত্যুর মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে? ওড়িশায় পাভেলের মৃত্যু তুলেছে সেই প্রশ্ন। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, ইন্ডিয়া টুডে
বিডি প্রতিদিন/কালাম