আগামী জুলাই থেকে জাপান বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নতুন করে তিমি শিকার শুরু করতে যাচ্ছে। এজন্য তিমি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইডব্লিউসি থেকেও নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে জাপান। কয়েক প্রজাতির তিমি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ১৯৮৬ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তিমি শিকার নিষিদ্ধ করে আইডব্লিউসি।
১৯৫১ সাল থেকে এই সংস্থার সদস্য জাপান বলছে, তিমি মাছ খাওয়া দেশটির সংস্কৃতির অংশ। অনেক বছর ধরে, জাপান তিমি শিকার করে আসছে, যা 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা'র কাজে ব্যবহার হয়, এবং পরে সে মাছ বিক্রি করা হয় বাজারে। এখন নতুন এই ঘোষণার মানে হলো, জাপান এখন বিলুপ্ত প্রায় মিংক প্রজাতির তিমিসহ সব ধরনের তিমি মাছ শিকার করতে পারবে।
জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা জানিয়েছেন, তিমি শিকার জাপানের জলসীমা এবং দেশটির অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে সীমিত রাখা হবে। যে কারণে অ্যান্টার্কটিক জলসীমা ও দক্ষিণে তিমি শিকার বন্ধ করে দেবে জাপান।
সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের টেকসই একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ব্যপারে তত আগ্রহী ছিল না আইডব্লিউসি। তারা কেবল সংখ্যায় তিমি মাছ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী। জাপানের উপকূলীয় এলাকার বহু জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে তিমি মাছ শিকার করে আসছে।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে তিমি মাছের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কারণ সেসময় দেশটির মাংসের প্রধান উৎস ছিল তিমি মাছ। এই মুহূর্তে জাপানে যত মাংস বিক্রি হয়, তার মধ্যে তিমির মাংস .১ শতাংশ বলে জানাচ্ছে দেশটির একটি প্রধান সংবাদপত্র।
বিশ্বব্যাপী তিমি মাছের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে, সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে আইডব্লিউসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিকার বন্ধে একমত হয়। জাপান, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডের মত যেসব দেশ সেসময় তিমি শিকার করত, তারা ভেবেছিল তিমির সংখ্যা একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছানো পর্যন্ত হয়ত ঐ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত সাময়িক ছিল না।
এই রাষ্ট্রগুলো তখন তিমি শিকার তাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ বলে নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বর্তমানে পৃথিবীতে তিমির সংখ্যা সন্তোষজনক অবস্থায় আছে, বেশিরভাগ তিমি প্রজাতিই বিপদাপন্ন নয়। গত সেপ্টেম্বরে জাপান আইডব্লিউসিকে বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের অনুমতি দেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
গত ৩০ বছর ধরে জাপান বৈজ্ঞানিক গবেষণার অজুহাতে নিয়মিত তিমি শিকার করে আসছে। প্রতিবছর দেশটি গড়ে ২০০টি থেকে ১২০০টি পর্যন্ত তিমি শিকার করে। কারণ হিসেবে দেশটির দাবি তারা তিমি মাছের সংখ্যা যাচাই করে কোন প্রজাতি বিপদাপন্ন কিনা তা দেখার জন্য এমনটি করে থাকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা