হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে নয়, ভারতের মূল দ্বন্দ্বটা হল ধর্মনিরপেক্ষতা ও মৌলবাদ ধ্যান-ধারণার মধ্যে এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এক ভিডিও বার্তায় তসলিমা জানান, ভারতেও একটা দ্বন্দ্ব আছে সেটা হল দুইটি আলাদা আলাদা ধ্যান-ধারণার ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মৌলবাদের। যারা মনে করেন যে ভারতের মূল লড়াইটা হল হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে আমি তাদের সঙ্গে একমত নই'।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরু লিটারেচার ফেস্টিভেল ২০১৫ অনুষ্ঠানে "আর উই হেডিং টুয়ার্ডস এন ইনটলারেন্ট ইন্ডিয়া টুডে?" শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানে তসলিমার একটি ভিডিও রেকর্ড বাজানো হয়। ওই ভিডিও রেকর্ডটিতেই তসলিমা এই বার্তা দেন।
তসলিমা জানান, আমার কাছে মূলত এই দ্বন্দ্বের অর্থ হল একদিকে যারা মুক্তমনা চিন্তাধারার মানুষ, যারা যুক্তিবাদে বিশ্বাসী অন্যদিকে যারা এইসবে বিশ্বাস করেন না অর্থাৎ অন্ধবিশ্বাসী। আমার কাছে দ্বন্দ্ব হল আধুনিক এবং আধুনিকতায় বিশ্বাস নয় তাদের মধ্যে, আমার কাছে দ্বন্দ্বটা হল মানবতা এবং বর্বরতার কিংবা নতুনত্ব এবং ঐতিহ্যের মধ্যে। যেখানে একদল মানুষ সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদল তখন আরও পিছিয়ে যেতে চাইছে। দ্বন্দ্বটা হল সেই দুইটি গোষ্ঠীর মধ্যে যারা স্বাধীনতার মূল্য দেয় আর যারা দেয় না'।
তসলিমা জানান, ভারত উপমহাদেশে খুব বেশি করে অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে, এটা এখানে নতুন কিছু নয়। পুরুষ শাসিত সমাজব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিয়িত ধর্ষণ, গার্হস্থ্য, পণপ্রথা কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে'।
বিশিষ্ট এই লেখিকার মতে, দুর্বৃত্তদের হাতে মুক্তমনা খুন কিংবা গোমাংস খাওয়ার গুজবে হত্যার ঘটনা কেবলমাত্র অসহিষ্ণুতার পরিচয়ই দেয় না, পুরো মানবজাতির উপরেও এটা এক ঘৃণ্যতম অপরাধ'।
তসলিমা জানান, সব ধর্মের মধ্যেই অসহিষ্ণুতার বিষয়টি জড়িয়ে আছে, এটি কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। অসহিষ্ণুতার কারণেই ভারত ভাগ হয়েছিল। অসহিষ্ণুতার জন্যই আমি দেশ (বাংলাদেশ) ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম এবং এই অসহিষ্ণুতার কারণেই আমাকে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যেতে হয়েছিল, আমার বইকে নিষদ্ধি করা হয়েছিল, আমার টিভি সিরিয়ালকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ২০০৮ সালে আমাকে ভারতও ছাড়তে হয়েছিল'।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা