বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার বিশ্ব এমডিএস দিবস উপলক্ষে বিএসএমএমইউ’র হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ এর সভাপতিত্বে সেমিনারে হেমাটোলজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. নাজিয়া শারমিন এবং ডা. কাজী ফজলুর রহমান বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেমাটোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা। প্যানেল অফ এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ এবং অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুজ্জামান খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডিএস রোগীদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য হেমাটোলজি বিভাগে এমডিএস ক্লিনিক চালু করা হয়েছে।
ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিন্ড্রোম চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষার সুবিধাদি সহজলভ্য হবে এবং এ রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা দেশেই নিশ্চিত হবে।
এদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও ২৫ অক্টোবর উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব এমডিএস সচেতনতা দিবস। এমডিএস রক্তের একটি রোগ যেখানে রক্তের উপাদানসমূহের মধ্যে এক বা একাধিক উপাদান কমে যায়। সময়ের সাথে এমডিএস থেকে রক্তের ক্যান্সার একিউট মায়লয়েড লিউকেমিয়াতে রূপান্তরিত হতে পারে। মায়েলোডিস্পলাস্টিক সিনড্রোম বা এমডিএস রোগে জীনগত পরিবর্তনের কারণে রক্ত তৈরি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন, হোয়াইট ব্লাড সেল এবং প্লেটলেট এগুলোর যেকোন একটি বা একাধিক এর পরিমাণ কমে যায় এবং কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। বয়সের সাথে এ রোগের আধিক্য দেখা যায়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে লাখে ৭৫ জন পর্যন্ত এ রোগে ভুগে থাকতে পারেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পৃথিবী জুড়েই মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ রোগে আক্রান্তরোগীর সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ রোগে আক্রান্তদের রক্তস্বল্পতা থাকতে পারে যার কারণে বারবার রক্ত পরিসঞ্চালন প্রয়োজন হতে পারে। হোয়াইট ব্লাড সেল কমে গেলে বা কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে বারবার ইনফেকশন হতে পারে। প্লেটলেট কমে গেলে বা কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তপাত হতে পারে।
সাধারণত সিবিসি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের উপাদান কমে যাবার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে বোনম্যারো পরীক্ষা এবং জেনেটিক টেস্ট এর মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করা যেতে পারে। জেনেটিক টেস্ট এ রোগের চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জেনেটিক টেস্ট এর মাধ্যমে রোগের ঝুঁকি নির্ণয়-বিশেষত লিউকেমিয়ায় পরিণত হবার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা নির্ধারণ করা যায়।
কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের শতকরা দশ জনের এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এমডিএস রোগীদের শতকরা ২৫-৩০ জনের লিউকেমিয়াতে রূপান্তরের সম্ভাবনা থাকে। প্রাথমিক ভাবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালন ও অন্যান্য সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেয়া হয়। ঝুঁকি কম হলে অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। ঝুঁকি ও জেনেটিক টেস্ট এর ফলের উপর নির্ভর করে ঔষধ ও কেমোথেরাপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এলোজেনিক হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন