প্রতিদিন খালি পেটে পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো- এমন তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে খালি পেটে পানি পানের নানা উপকারিতার কথা বলা হয়ে থাকে। এ সংক্রান্ত খবর ভুয়া। অনেকে ফেসবুক পোস্টেও পানি পানের জন্য বিভিন্ন রকম সময় নির্ধারণ করে পানি পানের পরামর্শ দেন। তবে এর সবগুলোই ভুয়া।
কোনো বিশেষ সময়ে পানি পান করলেই উপকার পাওয়া যায় বলে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা চর্চায়ও কোথাও দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে পানি পানের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া নেই।
২০১৯ সালে পানি পান নিয়ে এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, “দিনের বেলা পানীয় গ্রহণে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাইড্রেশনে অতিরিক্ত প্রভাব ফেলতে পারে। দিনের কোনো সঠিক সময়ে পানি পান করা উচিত তাই নিয়ে কিছু মিথ উঠে আসছে। যদিও এর সপক্ষে যুক্তি খুবই সীমিত।
এই ধরনের দাবিগুলির সঙ্গে অনেক সময়ই আয়ুর্বেদকে অকারণে জড়ানো হয়। অমৃতা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদার রিসার্চ ডিরেক্টর ডা. পি. রামমনোহর বলেন, “আয়ুর্বেদ অনুযায়ী তৃষ্ণা হচ্ছে একটি বেগ বা স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। নিয়ম হল যখনই কেউ তৃষ্ণা অনুভব করবে তখনই তাকে পানি পান করতে হবে। তৃষ্ণাকে অবহেলা করা উচিত নয়। গ্রীষ্মকাল বা শরৎকালে যখন খুব গরম থাকে আর ঘাম হয় তার বাইরে একসঙ্গে খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করতে আয়ুর্বেদে পরামর্শ দেওয়া হয় না। ওই দুটি ঋতুতে ঘাম বেশি হওয়ার কারণে শরীরকে তাজা রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্য ঋতুতে যখন কেউ তৃষ্ণার্ত বোধ করবে তখন পানি পান করতে হবে এবং তা সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে। আয়ুর্বেদে পানি পানের জন্য কোনো বিশেষ সময়ের পরামর্শ দেওয়া নেই।”
পানি পানের কোনো বিশেষ ভঙ্গির বিষয়েও কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আয়ুর্বেদেও এ সম্পর্কে কোনো পরামর্শের কথা বলা নেই। ডা. রামমনোহার বলেছেন, “গলায় যাতে আটকে না যায় তার জন্য আয়ুর্বেদে বসে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানি কীভাবে পান করতে হবে তার কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা সাধারণ জ্ঞান যে তাড়াহুড়ো করে পানি পান উচিত নয় বা খুব দ্রুত অনেকটা পানি পান উচিত নয় বা কোনো ভুলভাল ভঙ্গিতে পানি পান উচিত নয়। এ ধরনের কিছুতে চোকিং বা গলায় আটকে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।”
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত তা নিয়ে একাধিক বিতর্ক রয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক আর্টিকেল অনুযায়ী, “একজন মানুষের কতোটা তরল প্রয়োজন তা নির্ভর করে বয়স, বছরের সময়, জলবায়ুর পরিস্থিতি, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের ওপর, তাই এ সম্পর্কে কোনো DRV (ডায়েটারি রেফারেন্স ভ্যালু) বেঁধে দেওয়া কঠিন।”
প্রসঙ্গত, এরইমধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট (The Healthy Indian Project) খবরটি যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনেও প্রকাশ হয়েছিল ‘সকালে খালি পেটে পানি পান করার উপকারিতা’ শীর্ষক খবরটি। সেখানে বলা হয়েছিল পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন ৫-৬ লিটার পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করলে তা হজমের ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। তাতে পেটে গ্যাস ও পেট ফুলে থাকার মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। মূলত এ খবরটি ছিল ভিত্তিহীন।
মূলত: স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট (The Healthy Indian Project) খবরটি যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই