বিশ্ববাণিজ্য টালমাটাল করে দেওয়া পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে নতুন করে রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে না। ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগে এই তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে শুল্ক সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধান চান রপ্তানিকারকরা। আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছেন তারা।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আদায় করা হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদেশে বলা হয়, এত দিন থাকা শুল্ক হারের এটা অতিরিক্ত নতুন শুল্ক। ফলে পাল্টা শুল্কসহ নতুন শুল্কহার দাঁড়ানোর কথা ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ স্থগিতের পাশাপাশি শিপমেন্টও বন্ধ রাখতে বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। সরকারও তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন ট্রাম্পকে। চলমান আলোচনার মধ্যেই গত বুধবার রাতে বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে আরোপিত শুল্ক তিন মাস স্থগিত করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বাদ রেখেছেন একমাত্র চীনকে। রপ্তানিকারকেরা বলেছেন, এই তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে চৈতী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জন্যও সুসংবাদ। বাংলাদেশের অনুরোধ গ্রহণের ফলে প্রতীয়মান হয় যে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমরা আশা করি, আমরা একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধানে পৌঁছাতে সক্ষম হব। স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ট্রাম্প-যুগের শুল্কনীতি তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ কিছুটা স্বস্তি এনেছে। আমাদের বিদ্যমান কমবেশি ১৬ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে ১০ শতাংশ ফ্ল্যাট নতুন শুল্ক বহাল থাকবে। সব দেশের ক্ষেত্রেই একই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে নতুন করে আরোপিত অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আর থাকবে না। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক অপরিবর্তিত থাকলে চীনের পোশাক রপ্তানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ ধরতে পারবে। বাজার ধরার পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক আপাতত স্থগিত করলেও সরে আসেনি। সরে আসবে বলেও মনে হয় না। এটা কার্যকর করবেই। তার আগে তিন মাস সময় দিয়ে চীন বাদে অন্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখতে চায়, যাতে দেশগুলো সময় পায়। আবার এসব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে ওইসব দেশের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে ছাড়ও দিতে পারে। গতকাল এক অনুষ্ঠানে কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিয়াক সুং বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। তবে, সঠিক কৌশল এবং সংস্কারের মাধ্যমে দেশটি শীর্ষস্থানে যেতে প্রস্তুত। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নত এবং নিজস্ব উৎপাদন সুবিধা স্থাপন করতে হবে।