ভারতের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উভয় দেশের জন্য উপকার হয়, এমন একটি সমাধান বের করতে আলোচনায় বসা উচিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। গত মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এই সুবিধা বাতিল করে একটি আদেশ জারি করেছে। এতে ২০২০ সালের ২৯ জুন দেওয়া এ-সংক্রান্ত আদেশও বাতিল করা হয়েছে। কভিডের সময় এ সুবিধা দেয় ভারত। এত দিন পেট্রাপোলসহ ভারতের দুটি বন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে পণ্য পাঠাত বাংলাদেশ। বিশেষ করে তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষিপণ্য। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত, যা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতীয় বন্দর এবং বিমানবন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর প্রভাব ফেলবে, বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই সুবিধা বাণিজ্য সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ‘লজিস্টিক্যাল’ চাপ বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে এর প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আশা করি ভারত তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং উভয় দেশের জন্য উপকার হয়, এমন একটি সমাধান বের করতে আলোচনায় বসবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ভারত এমন একটি সময়ে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঠিক একই সময়ে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় আমাদের রপ্তানি খরচ এবং পণ্য পৌঁছানোর সময় আরও বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মতো বর্ধনশীল খাতের প্রতিযোগিতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বৃহত্তর সমস্যাকে তুলে ধরেছে। এমন পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ওয়ালটন, আসবাবপত্রের প্রতিষ্ঠান হাতিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নেপালে পণ্য রপ্তানি করে। রপ্তানি তালিকায় রয়েছে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন, আসবাব, খাদ্যজাত পণ্য ইত্যাদি। অন্যদিকে ভুটানে যায় জুস, ড্রিংক, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য। আর ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের পণ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।