মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ডিপার্টমেন্ট ইউএসটিআরের কাছে পাঠানো হবে।
গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, একজন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসাডর, ১০ জনের মতো সচিব এবং বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি ইউএসএ অফিশিয়াল। সেটা ঢাকায় তাদের অ্যামবাসি অফিশিয়াল, ওদিক দিয়ে ইউএসএ এর ইউএসটিআর। আমাদের যেটা ডিসিশন আমরা দুটি চিঠি দেব। দুটি চিঠি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাবে। একটা চিঠি যাবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আর একটা চিঠি যাবে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার তরফ থেকে ইউএসটিআরের কাছে।
চিঠিতে কী থাকবে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে কী কী থাকবে, কী ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ তা নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে। আজকে চারজন উপদেষ্টা ছিলেন, একজন হাইলি রিপ্রেজেন্টার ছিলেন, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসাডর, আমাদের প্রায় দশজনের মতো সেক্রেটারি ছিলেন, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- খুব দ্রুত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি যাবে। চিঠিতে যাই থাকুক তা আমাদের বিজনেসবান্ধব হবে। আমাদের বাংলাদেশের বিজনেসের স্বার্থটা দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্পিটিটিভ যেসব কান্ট্রি আছে তাদের চেয়ে আমরা আরও বিজনেসবান্ধব হব, এই চিঠিটা হবে। আরও বেশি বিজনেসবান্ধব হবে, যাতে করে ইউএসএ এবং আমাদের জন্য উইন উইন সিচুয়েশন হয় এবং আমাদের জন্য মার্কেট এক্সেসটা যেন আরও বাড়ে। আমরা চাই ইউএসএ পৃথিবীর লার্জেস্ট মার্কেট, সেখানে আমাদের আরও অনেক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার সুযোগ আছে। যেটা আমাদের উপদেষ্টারা এবং বিজনেস লিডাররা আজকে বললেন।’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমেরিকা থেকে যদি কিছু আমদানি করা লাগে আমরা তা করব। এতে করে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতিটা কমবে। তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। আমেরিকার ইকোনমিক বেটার ইকোনমিক। তাদের সঙ্গে আমাদের ট্যারিফ নন ট্যারিফ বেরিয়ার যেগুলো আছে- সেগুলো দূর করা হবে। এ জন্য আলোচনা করা হবে কোনো অসুবিধা যেন না হয়।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমদু বলেন, ‘এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা কেউ জানি না। এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের নাড়াচাড়া খাবে। আমরা একটা কাজ করব, যাতে করে আমাদের আরএমজিটা রক্ষা পায়। যেন আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারি। এর প্রভাব অবশ্য আমেরিকার ভোক্তাদের ওপরও পড়বে। মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর পড়বে। তবে এখানে আমরা শ্রমিকের মজুরি আর কমাতে যাব না। আমরা শ্রমের মূল্যে এমনিতেই সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছি। শ্রমিকের খরচ কমানো যাবে না আমাদের। উৎপাদন বাড়াতে পারব।’ প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আমদানি বাড়ানো সম্ভব। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করব।’
ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মনজুর বলেন, ‘সরকারের যে পরিকল্পনা তাতে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। আমাদের কমপেটিটিভ যেন না কমে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হলে আমরা এটা ওভারকাম করতে পারব। আমরা ইউএসএ থেকে কী কী কিনতে পারব। সেটা দেখতে হবে। আমাদের বায়ার ও উৎপাদকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটা নির্দেশনা দিতে পারব।’ স্কয়ারের টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আসলেই যতটা চিন্তিত ছিলাম। আজকের আলোচনায় আমরা একটা স্পষ্ট নির্দেশনা পেয়েছি।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত স্থগিতের সম্ভাবনা নেই- বাণিজ্য উপদেষ্টা : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘটনাকে হাইপার ডাইনামিক স্টোরি (দ্রুত পরিবর্তনশীল ঘটনা) বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্থগিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
গতকাল সকালে ঢাকার গুলশানে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে অনুষ্ঠিত ‘ব্রেকফাস্ট অন ট্রেড ব্যারিয়ার্স’ শীর্ষক বৈঠক শেষে সচিবালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে এমন মন্তব্য করেন। বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা মো. আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক কেমন হলো এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘ভালো হয়েছে। আমরা একটা ধারণা পেয়েছি যে আমাদের ধরনের অর্থনীতি যাদের আছে, পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে তারা কী অনুসরণ করছে এবং আমরা কী পদক্ষেপ নিতে পারি।’
মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলবে না। আলোচনা হয়েছে, কিছু দিকনির্দেশনা পেয়েছি। এর মধ্য থেকে আমরা কী প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হব, তা বোঝার চেষ্টা করেছি। অবশ্য গতকালই বলার চেষ্টা করেছি যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে মূল যোগাযোগের কাজটা করবেন। আর আমরা যারা দায়িত্বে নিয়োজিত আছি, তারা অপর পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাকি কাজটা করব।’
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ধারণা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে ৯ তারিখে কোনো কোনো দেশের জন্য স্থগিতাদেশ আসবে। এ ধরনের কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটা হচ্ছে যে এটা একটা হাইপার ডাইনামিক স্টোরি এবং বিশ্ববাণিজ্যে এর প্রভাব পড়েছে। দেখা যাক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালকও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।