ঢাকার নির্মাতার নির্দেশনায় কাজ করছেন, কেমন লাগছে?
হুম, টলিউড আর ঢালিউডের কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য মনে হচ্ছে না। কারণ দুই বাংলার আশা, ভাষা আর সংস্কৃতি একই সূত্রে গাথা। তারপরও বলব, যেহেতু এপার বাংলায় এটি আমার প্রথম কাজ তাই অনুভূতি অবশ্যই ফুরফুরে। কারণ এ দেশের ভালো ভালো গল্প এত বেশি শোনা হয়েছিল যে, বাংলাদেশকে ঘিরে মনের মণিকোঠায় ভালো লাগার একটি চিত্র অাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা, এখানে আসি। কিন্তু এই আসাটা যে একেবারে নিজের প্রিয় কাজ অর্থাৎ অভিনয়ের কারণেই হবে, তা কিন্তু ভাবিনি। সুতরাং ভালোলাগাটা এখন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আর নির্মাতা হিসেবে অনন্য মামুন সত্যিই পারফেক্ট। তার নির্দেশনায় মুন্সিয়ানার ছাপ আছে। দক্ষ নির্মাতা হিসাবে ইতোমধ্যে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন।
সুযোগ পেলে ঢাকার চলচ্চিত্রে কাজ করবেন?
আবশ্যই, কারণ আগেই বলেছি দুই বাংলার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। মনে হচ্ছে, নিজের দেশেই আছি। যদিও সময়, সুযোগ এবং হাতের কাছে না পাওয়ায় ঢাকার ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এখানকার ছবি ও শিল্পী সম্পর্কে কম জানলেও অনেক ভালো ছবির কথা শুনেছি। যেমন সূর্য দীঘল বাড়ী, নয়নমণি, অবুঝ মন, মনপুরা, টেলিভিশন, চোরাবালি, মাটির ময়নাসহ আরও অনেক। এসব ছবির গল্প শুনে আমারও লোভ হয়, ঢাকার ছবিতে কাজ করার। তবে ইচ্ছে যে পূরণ হয়নি তা কিন্তু নয়। এই যে এখন দুই বাংলার 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবিতে কাজ করছি। এ বছরই আরেকটি যৌথ আয়োজনের ছবিতে কাজ করার কথা রয়েছে। মনে হচ্ছে, আমার ইচ্ছে ঢাকার আকাশে সোনালি ডানা মেলেছে।
যৌথ আয়োজনের নতুন ছবি সম্পর্কে কিছু বলুন।
শীঘ্রই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ হয়েছে মাত্র। 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবির টিমই নির্মাণ করবে এ ছবিটি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অচিরেই ছবির নাম-ধাম গল্প আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সে পর্যন্ত না হয় আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনি।
এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই, টেকনোলজি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি নিয়ে সিনেমায় আসা কেন?
হ্যাঁ তাই তো...হা,হা,হা...ভালো প্রশ্ন করেছেন। তাহলে মনের কথাই বলি, ছোট বেলায় রুপালি পর্দায় বড় বড় তারকাদের ছবি দেখে সাধ জাগত, আহা! আমিও যদি বড় পর্দার বাসিন্দা হতে পারতাম। কিন্তু আমার পরিবার আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই হেঁটেছে। তবে ইচ্ছেটা বরাবরই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম। গোপনে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সুযোগ পেয়েই তা কাজে লাগালাম। প্রথমে ২০০৭ সালে অশোক পতির উড়িয়া ছবি 'মাতে তা লাভ হেলারে' ছবিতে মেঘা চরিত্রে অভিনয় করলাম। এরপর একই বছর প্রভাত রায়ের কলকাতার বাংলা ছবি 'পিতৃভূমি'তে কাজ করি। ২০০৮ সালে এলো আমার প্রকৃত স্বপ্ন পূরণের মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই বছর প্রখ্যাত নির্মাতা হরনাথ চক্রবর্তীর বিগ ক্যানভাসের ছবি 'বাজিমাত'-এ অভিনয় করে আনন্দলোক পুরস্কার পেলাম। দর্শকও আমাকে লুফে নিল। তারপর থেকে তো শুধুই সাফল্যের পথে হেঁটে চলা। সফলতার ঝুলিতে আরও কয়েকটি পুরস্কার পুরে নিলাম। এগুলো হলো- 'নায়িকার খোঁজে'র জন্য আনন্দলোক, 'খোকা ৪২০'র জন্য কালাকার পুরস্কার প্রভৃতি। আমার এই সাফল্যে পরিবারের মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠল। এক সময় সব বাধা দূর হয়ে গেল। আমিও ফুরফুরে হাওয়ায় ভেসে চললাম।
সহশিল্পী দেবের সঙ্গে পুতু পুতু সম্পর্কের কথা কিন্তু বাতাসে সুগন্ধি ছড়িয়েছে, তা জল বুঝি অনেকদূর গড়িয়েছে?
আরে না, সবই উড়ো খবর। যদিও সেলিব্রেটিরা প্রেমের খবর নিয়ে লুকোচুরি করে আমি কিন্তু দিব্যি দিয়ে বলছি, দেবের সঙ্গে জমজমাট পর্দা রসায়নের বাইরে আর কোনো অাঁকিবুঁকি নেই।
শুনেছি এবার হিন্দি ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে মনে রং ধরিয়েছে?
যাক বাবা সে খবরও তাহলে কানে পৌঁছে গেছে দেখছি। তাহলে কানে কানেই বলি, সে ইচ্ছেটা আসলে উসকে দিয়েছে সালমান খান। ও আমার স্বপ্নের পুরুষ। বড় ইচ্ছে করে তার সঙ্গে কাজ করতে। আমার বিশ্বাস এ স্বপ্ন কখনো অধরা থাকতে পারে না। কারণ এ পর্যন্ত দেখা আমার দিবা-রাত্রির সব স্বপ্নই পূরণ হয়েছে।
শীঘ্রই নাকি বিয়ের সানাই বাজবে?
একটু বেশি শোনা হয়ে গেল না। হা, হা, হা। আসলে কি জানেন সেলিব্রেটিদের সাংবাদিকরা এতটাই ভালোবাসে যে, তাদের কাছ থেকে সুখ-দুঃখ কিংবা হাঁড়ির খবর, যাই বলেন, কোনো কিছুই লুকোনো যায় না। লুকাতে চাইলেও কিভাবে যেন কথার মারপ্যাচে ফেলে পেটের ভিতর থেকে খবর বের করে ফেলে। হ্যাঁ, পরিবার বিয়ের কথা বলছে। মাঝে-মধ্যে জানতে চায় আমার পছন্দ-টছন্দ আছে কিনা। আমি শুধু বলেছি, সুপুরুষ হলেই চলবে। তাও চার বছরের আগে নয়। কারণ আগামী চার বছর পর্যন্ত ছবির সিডিউলে আমি বুকড।
বিয়ের পরও নিশ্চয় অভিনয় চালিয়ে যাবেন?
কখনো না, কারণ একসঙ্গে আমি একটির বেশি কাজে মনোযোগ দিতে চাই না। মানে, যে কাজ যখন করি তখন তাতেই মন-প্রাণ সঁপে দেই। না হলে সার্থকতা আসে না। এই যেমন অভিনয়কে জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে নিয়েছি বলে স্বল্প সময়ে দর্শকের ভালোবাসা ও পুরস্কার দুইই পেয়েছি। তাই যখন বিয়ে করব, তখন সংসারই হবে আমার পরম ধর্ম। তাহলে বিবাহিত জীবনেও সফল হব। এটি হচ্ছে আমার ব্যক্তিগত থিওরি। আমার বিশ্বাস, আমার থিওরিতে কোনো ভুল নেই। কারণ বিয়ে একটি সামাজিক ও পারিবারিক ব্যাপার। আমরা কেউ বিয়ে নামক এই সামাজিক বন্ধনকে উপেক্ষা করতে পারি না।
সবশেষে সাধারণ মেয়ে শুভশ্রীকে জানতে চাই।
শুভশ্রী আসলেই সাধারণ মেয়ে। পরিবার আর কাছের মানুষের সঙ্গে মজা করে হাসি-খুশিতে সময় কাটাই। যখন আয়নায় নিজের মুখ দেখি তখন নিজেকে নিজের কাছেই খুব ইনোসেন্ট মনে হয়। অবাক হয়ে আয়নায় দেখা শুভশ্রীকে বলি- তুমি কী আসলেই নায়িকা শুভশ্রী, হা, হা, হা...।