পাবনায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) স্থাপিত গভীর নলকূপ পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। ভেঙে পড়েছে সেচব্যবস্থা। অনাবাদি পড়ে আছে কয়েক শ বিঘা জমি।
এই নলকূপের আওতায় ছয় বিঘা জমি চাষ করেন জনি প্রামাণিক। ঠিকমতো পানি না পেয়ে লোকসানের আশঙ্কায় ধান চাষ বন্ধ রেখেছেন তিনি। অন্য ফসল চাষ করলেও বেশির ভাগ সময় অনাবাদিই থাকছে জমি। তিনি বলেন, পানির জন্য ধরনা দিতে হয়। অর্ধেক জমি ভেজে আর অর্ধেক শুকনা থাকতেই পানি বন্ধ করে দেয়। কৃষক নান্নু প্রামাণিক বলেন, সমিতির প্রত্যেক চাষি প্রতি বিঘা ৯০০ টাকা হারে রশিদ কেটে চাঁদা দিয়ে নলকূপের কিস্তি পরিশোধ করেছি। লোকমান নামে একজনের কিছু টাকা পাওনা ছিল। আমরা সব টাকা পরিশোধের পরও তিনি (লোকমান) মালিকানা দাবি করছেন।
সমিতিভুক্ত কৃষক বাবুল, মুকিম, সৌরভ, হান্নানসহ কয়েকজন জানান, নিজ খুশি অনুযায়ী নলকূপ চালায় লোকমান গং। প্রতি বিঘায় অন্য নলকূপ ১৫০০-১৮০০ টাকা নিলেও লোকমানরা নেন ২৫০০-৩০০০ টাকা। ক্যানেল ভেঙে ইট নিজের বাড়ির কাজে লাগিয়েছেন লোকমান। রবিশস্য মৌসুমে অযথা পানি ছেড়ে অনেকের জমির সরিষা নষ্ট করেছেন। এখন ধান পুড়ে গেলেও পানি দেন না। তারা বলেন, এ নলকূপের আওতায় শুরুতে ২৫০ বিঘার মতো জমি ছিল। তাদের অত্যাচারে শতাধিক বিঘা জমি অন্য নলকূপে চলে গেছে। নলকূপটি সমিতিকে বুঝিয়ে দিয়ে সঠিকভাবে পরিচালনার দাবি জানান তারা।
অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন লোকমান হোসেন ও তার ছেলে সেলিম রেজা। তারা বলেন, শুরুতে নলকূপটি সমিতিকে দেওয়া হলেও ঋণের টাকা সমিতির কেউ না দেওয়ায় এটি আমরা কিনে নেই। আমাদের থেকে নলকূপ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আদালতে মামলা করি। রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। পানি না দেওয়া বা অব্যবস্থাপনার অভিযোগের বিষয়ে সেলিম রেজা বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী সব জমিতেই পানি দেওয়া হয়। একটি চক্র আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এ ছাড়া কিছুই নয়।
বিএডিসি পাবনা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আফনান আজম রুদ্র বলেন, দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়া নলকূপটি বিআরডিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেচ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে জটিলতা নিরসনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বিএডিসি সূত্র জানায়, কৃষিতে সেচ সুবিধার্থে ১৯৮৪ সালে পাবনা সদর উপজেলার দুর্গারামপুরে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। ঋণের মাধ্যমে দুর্গারামপুর উত্তরপাড়া কৃষক সমবায় সমিতিকে ৯৯ হাজার টাকায় নলকূপটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাষিদের ঋণ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে বিএডিসিকে পুরো টাকা পরিশোধ করে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-বিআরডিবি। নলকূপ পরিচালনায় সমিতির অন্যতম সদস্য লোকমান হোসেন ম্যানেজার নিযুক্ত হন। সমিতির আওতাধীন কৃষকদের থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তুলে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বিআরডিবির ঋণের ৯৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেন লোকমান। কৃষকদের অভিযোগ, শুরুতে কিছুদিন ভালোই চলছিল। এরপর লোকমানের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনায় সেচব্যবস্থা ব্যাহত হয়। তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন সমিতি সদস্যরা। সালিশে প্রথমবারের মতো সংশোধনের সুযোগ দিয়ে পুনরায় তাকে দায়িত্বে রাখা হয়। কিছুদিন পর ঋণের টাকা নিজে পরিশোধ করেছেন উল্লেখ করে নলকূপের মালিকানা দাবি করেন লোকমান। ১৯৯৯ সালে আদালতে ভুয়া মামলা করে তিনি সমিতির সদস্যদের ওই নলকূপ ব্যবহারে বাধা দেন। ২০১০ সালে মামলার রায় দেখিয়ে সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে নলকূপের নিয়ন্ত্রণ নেন লোকমান।