নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার প্রচারণা চালনোর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসের ও তার বাহিনী এ হামলা চালায়।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও মূল হামলাকারী গ্রেফতার না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. চাঁন মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার প্রচারণা চালানোর সময় ২৫ ডিসেম্বর সাড়ে ১১টায় চানপাড়ার রাসেল নগর ইউনিয়নে যান ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৩৫ জন। এসময় বাঙালি জাতির বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরে গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসের দলবলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেন।
তিনি বলেন, শমসের ও তার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান মাসুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধার আজিজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াসহ উপস্থিত ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করেন। তারা হাসান মাহমুদকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের অন্ডকোষে লাথি দিয়ে গুরুতর আহত করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া বলেন, ঘটনার পর ২৫ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করি। কিন্তু সংসদ সদস্য গাজীর কারণে শমসেরকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় নাই। আমরা চাই তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা বিচারের আওতায় আনা হোক।
কিছুদিন আগেও শমসেরকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গাজীর শক্তির কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। অপরাধ করে গাজীর বাড়িতে আশ্রয় নেন শমসের। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে শমসেরের নেতৃত্বে ১২৮টি মাদকের কেন্দ্র পরিচালিত হয়। গাজী ও গাজীর পুত্র পাপ্পা গাজী এবং তাদের এপিএস এমদাদের নেতৃত্বে এই সমস্ত মাদকের কারবার পরিচালনা করেন শমসের। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা মাসোহারা পায় গাজী পরিবার ও এপিএস এমদাদ।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক বলেন, আমরা ভোটের প্রচারণা করছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের ওপর নৌকার মিছিল থেকে হামলা করা হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার অন্ডকোষে লাথি দেয় সন্ত্রাসীরা। এছাড়া আমার গায়ে লাথি-ঘুষিও দেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ সেলিম বলেন, শাহজাহান ভূইয়া রূপগঞ্জের ছেলে। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এই এলাকার সন্তান না। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করলেও গাজী পরিবার রূপগঞ্জে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাদের কুকীর্তি, জোরপূর্বক জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার তথ্য রূপগঞ্জের জনসাধারণ জানে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, পোষ্টার ফেষ্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার বিচার চাই। শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রায় পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীর দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে আমরা নৌকার পরিক্ষীত সৈনিক ও রূপগঞ্জের সন্তানের প্রচারণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ মিয়া, ফজলুর করিম মোল্লা, নজরুল ইসলাম, আক্তার হোসেন মোল্লা, হাসান মাহমুদ, মো. আক্তারুজ্জামান (বাবুল), ইব্রাহিম খলিল, আব্দুল মান্নান আজাদ, আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া, নাজীম উদ্দিন, আব্দুল ওহাব মিয়াসহ আরো অনেকে।