রাজধানীর পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলামের অপকর্ম, ঘুষ, নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশ করায় মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার সাপ্তাহিক নতুন বার্তা সম্পাদক ইউসুফ আহমেদ তুহিনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়েছে মিরপুর সম্মিলিত সাংবাদিক জোট।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লায়েকুজ্জামান লায়েক বলেন, আমরা সাংবাদিকরা পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই না। সাংবাদিক তুহিন সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরতে গিয়ে পল্লবী থানা পুলিশের রোষানলে পড়েছেন। তুহিনের বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে এই মামলার কোনো বাদী নেই। সেই মামলাটি অস্তিত্বহীন একটি বাদীর মামলা। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি সমাজের বাড়ে না। পুলিশ তাদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, সে সময় এরকম দুই-চারজন পুলিশ অফিসার বিভিন্ন থানায় রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক মত-আদর্শের কিছু ক্যাডারদের পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সেই সমস্ত ক্যাডাররা এখনো বিভিন্ন থানার ওসি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকেও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ২০০৩ সালের ব্যাচ। ছাত্রদলের ক্যাডার ছিল, আমি জেনে শুনে বলছি। যারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন বিতর্কিত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সাংবাদিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে নয়, অপরাধীর বিরুদ্ধে। অপরাধ যেই করুক সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে। অপরাধ যেই করবে সে সমাজের বিরুদ্ধে। অপরাধ যদি পুলিশ করে আমি সেই নির্দিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। সমাজের অপরাধীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাজ। আমরা সেই কাজটাই করছি। অনুরোধ জানিয়ে বলছি অস্তিত্বহীন মামলা, বাদীবিহীন মামলা ও ওসির অপকর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে একজন দেশের নাগরিককে হয়রানি করার যুক্তি থাকতে পারে না।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সাংবাদিক তুহিনের সাথে পল্লবী থানার পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে এতে করে বুঝা যাচ্ছে পল্লবীর সাংবাদিক নিরাপদ নয়। ওসি পারভেজ পল্লবীর সংবাদকর্মীদের যে কোনো সময়, যে কোনো মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার হতে পারে আশঙ্কা কথা জানায়। আমরা সাংবাদিক তুহিনের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
তুহিনের পরিবারের এক সদস্য ইমন বলেন, গত মঙ্গলবার তুহিন পল্লবীর ওসির ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। দুই ঘণ্টা পর পল্লবী থানার এসআই জহির উদ্দিন তার (তুহিন) সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। আর বলেছেন ওসি সাহেব নাকি তার (তুহিন) সঙ্গে কথা বলবেন। তখন তুহিন থানায় যাওয়ার পর তাকে থানার গারদে ঢোকানো হয়েছে এবং পরে কথিত মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক মাস আগে পল্লবী থানার ওসির অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, দুদুক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তুহিন। আর মঙ্গলবার ওসির অপকর্মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। আর এতেই তিনি ওসির রোষানলে পড়েন।
তিনি মঙ্গলবার পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক তুহিন যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন- তা হলো-
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলামের সীমাহীন অপকর্ম ও কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ প্রসঙ্গে-
‘পল্লবী থানার বর্তমান ওসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পল্লবী থানা যেন অনিয়ম, দুর্নীতি, মাদক বাণিজ্য, দখলপাল্টা দখলের থানায় রূপ নিয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অসংখ্য অভিযোগ জমা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ওসির বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে রয়েছে হেফাজতে নির্যাতনের মতো ভয়াবহ সব অভিযোগ। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর যুক্ত হলো থানা থেকে আসামি উধাও হওয়ার ঘটনা। পুলিশের সহযোগীতা ছাড়া কীভাবে একজন ডাকাতি মামলার আসামি হ্যান্ডকাফ খুলে চলে যেতে পারে? ইতোপূর্বে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়েছিল পারভেজ নামে এক মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলার আসামি পারভেজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে, পুলিশ কিন্তু তাকে গ্রেফতার করেনি।
এদিকে, হ্যান্ডকাফসহ যে পারভেজ পালিয়েছে তাকে না ধরে অন্য এক নিরীহ কাপড় ব্যবসায়ী পারভেজের বাসায় ওসির নেতৃত্বে ১০ লাখ টাকা ডাকাতির অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
‘এতো অন্যায় করার পরও ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এমন সাহস বোধহয় পুলিশ বিভাগে কারো নেই। আমরা নিরীহ মানুষ জিম্মি পল্লবী থানার একজন ওসির কাছে। বাধ্য হয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করবো আমরা। পল্লবীবাসী ওসির প্রতি কনিষ্ঠা আঙুল প্রদর্শন করে অনাস্থা জানাবে প্রেস ক্লাবের সামনে। পরবর্তীতে ওসির বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরসহ একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের অনাস্থাপত্র হস্তান্তর করব। এরপরও কাজ না হলে আরও কর্মসূচি নিতে হবে। প্রয়োজনে আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। যেহেতু এই ওসি পল্লবীতে থাকলে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবো না, তার চেয়ে মরে যাওয়ার অনুমতি চাইবো। যেহেতু অতীতে কোনো আইন ভঙ্গ করিনি, সেহেতু আত্মহত্যার মতো একটি আইন ভঙ্গ করার কাজ করতে হলে অনুমতি আবশ্যক। তবে আত্মহত্যার অনুমতি যদি রাষ্ট্র দেয় সেক্ষেত্রে ওসির কারণে জীবন দিতে হবে। সেই ওসির কুশপুত্তলিকাকে জুতা মারা কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে কুশপুত্তলিকা পোড়ানো কর্মসূচিও পালন করার চেষ্টা করব।’
মানববন্ধনে ক্রাইম রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) সাবেক অর্থ সম্পাদক ও ইনকিলাবের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আজিজুল হাকিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লায়েকুজ্জামান লায়েক, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর, মিরপুর সম্মিলিত সাংবাদিক জোট সভাপতি মিজানর রহমান মোল্লা, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত