বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের নানা অভাব-অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে আগত ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা শুরু করলেও কেউ ঠিকভাবে খাবার পাচ্ছেন না আবার কেউ পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় ওষুধ। বিশেষ করে স্বজনহীন দগ্ধরা পড়েছেন বেকায়দায়। তবে কেউ কেউ চিকিৎসায় সস্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
চিকিৎসাধীন রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা থেকে আগত বার্ন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক।
ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দ্বগ্ধ ৮১ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গুরুতর ১৯ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। পথিমধ্যে মারা যায় একজন শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ১৬ জন রোগী বাড়ি ফিরে গেছেন।
আজ সকাল পর্যন্ত শেবাচিমে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৬ জন দগ্ধ রোগী। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ৩ জন আইসিইউতে, হাত-পা ভেঙে যাওয়া ৫ জন অর্থপেডিক্স বিভাগে এবং ৫ জন শিশুসহ ৩৮ জন সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের হাসপাতালের ৪র্থ তলার একটি খালি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সরকারিভাবে তাদের সুচিকিৎসার নির্দেশ দেয়া হলেও চিকিৎসাধীন রোগীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। প্রয়োজনের সময় ডাক্তার ডেকে না পাওয়ার অনুযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। হাসপাতাল থেকে আইভি স্যালাইন আর ইনজেকশন ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না বলে তারা দাবি করেছেন। বিশেষ করে স্বজনহীন রোগীরা পড়েছেন চরম সমস্যায়। টয়লেট-বাথরুমে যেতে কারও সাহায্য পাচ্ছেন না তারা। সরকারিভাবে ৩ বেলা নামমাত্র খাবার দেয়া হলেও খাবার পানি দেয়ার মতো কেউ নেই তাদের। প্রয়োজনীয় খাবারসহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন না তারা।
এদিকে, বরিশাল শেবাচিমের বার্ন ইাউনিট বন্ধ থাকায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছেছেন ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা সব রোগী পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ কারণে তাদের সেবায় সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছে অনেকে।
দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকা থেকে আগত ৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুরুল আলম বলেন, লঞ্চের আগুনে দগ্ধদের মধ্যে শেবাচিমে চিকিৎসাধীন ৫ জনের শ্বাসনালীসহ মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে। তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশীরভাগের মুখমণ্ডল এবং হাত ও পায়ের তালু পুড়ে গেছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। তাদের যথাযথ চিকিৎসা চলছে। যাদের এখানে অপারেশন সম্ভব তাদের এখানেই অপারেশন করা হবে এবং অন্যদের প্রেরণ করা হবে ঢাকায়।
দগ্ধ রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে শেবাচিম হাসপাতালে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। দগ্ধ রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অভাব-অভিযোগ পূরনে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে পরিচালক জানিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন