রাজধানীর বনানীতে প্রাইভেটকার চাপায় পা হারানো সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা মনোরঞ্জনের ওপর দুর্ঘটনার দায় চাপিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জিডির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া। তিনি জানান, সাঈদ হাসান দুর্ঘটনার বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) একটি জিডি করেন।
জিডি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর গাজী।
জিডিতে সাঈদ হাসান উল্লেখ করেছেন, ‘গত ২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কামাল আতাতুর্ক সড়ক হয়ে কাকলী চৌরাস্তা এসে বামে টার্ন নিয়ে এয়ারপোর্ট রোডের ডিভাইডারের পূর্বপাশে দক্ষিণমুখী ওয়ানওয়ে সড়কে উঠিয়া কিছু দূর আসিয়া চেয়ারম্যান বাড়ির নিকটস্থ ইউলুপে আসি। ডিভাইডারের পূর্ব পাশের দক্ষিণমুখী গাড়ি পশ্চিম পাশের (উত্তরমুখী) ওয়ানওয়ে রাস্তায় প্রবেশের জন্য মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে নিম্নগামী এয়ারপোর্ট রোডের এই দ্বিতীয় ইউলুপটি রাখা হয়।
আমার গাড়িটি এই দ্বিতীয় ইউলুপটির প্রবেশ স্থলে আসলে একই ইউলুপের উল্টো দিক থেকে প্রবেশ করা ও অগ্রসরমাণ একটি মোটরসাইকেলের সম্মুখে পড়ে যায় এবং মোটরসাইকেলটির মাথা বা হেডলাইট আমার গাড়ির বনেটের বাম পাশের হেডলাইট বরাবরে আকস্মিকভাবে ধাক্কা খায়। এই দুর্ঘটনার ফলে আমার গাড়িটি ইউলুপের প্রাচীরে লেগে যায় এবং আমরা প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই।
আমার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় নাই বা পেছন থেকে ধাক্কা দেয় নাই। বরং বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে এই ইউলুপে প্রবেশ করে অগ্রসরমাণ ওই মোটরসাইকেলের আরোহী আমার গাড়ির বাম পাশের হেডলাইট বরাবর লাগিয়ে দেয় এবং এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার স্ত্রীর ডান হাতের তিনটি আঙুল ফ্রাকচার হয়। আমি ঘাড়ে ব্যথা পাই। আমি রাতেই ইউনাইটেড হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যাই। আমার স্ত্রীকে গত ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তার ডান হাতে তিনটি আঙুলে ফ্রাকচার হয়। তার হাতের প্লাস্টার এখনো খোলা হয়নি।
ওই সিসিটিভি ফুটেজেই দেখা যাবে যে, মনোরঞ্জন হাজং গুলশান-২ এর সড়ক ৮২ এর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ও ট্রাফিক নিষেধ অমান্য করে এই ইউলুপের পশ্চিম পাশ থেকে অর্থাৎ উল্টো পথে তার মোটরসাইকেল নিয়ে তার জন্য নিষিদ্ধ এই ইউলুপে প্রবেশ করেন এবং ইউলুপের পূর্বের রাস্তায় উঠার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে এগিয়ে যান। মনোরঞ্জন হাজং জানেন যে, উল্টো দিক থেকে এই ইউলুপে প্রবেশ করে ইউটার্ন নেয়া বা ডিভাইডারের পূর্বের রাস্তায় উঠার চেষ্টা করা বা ইউলুপে পার্কিং করা এ সকল কাজ ট্রাফিক আইনে নিষিদ্ধ, অনিরাপদ এবং তার এইরূপ কাজের জন্য রাস্তার পূর্ব পাশে চলাচল করা যে কোনো গাড়ি বা এই ইউলুপে প্রবেশকারী যে কোনো গাড়ি এবং উহার চালক ও আরোহী মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার এবং প্রাণনাশের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে, যেভাবে আমরা হয়েছি। আমরা এই ভাবে মৃত্যু কামনা বা দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’
এ ঘটনার পরও মনোরঞ্জন হাজংকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেখানে দুই দফায় আর্থিক সহযোগিতাও করেন। পরে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অপারেশনের ব্যবস্থা, কেবিন বরাদ্দ, এমনকি মেডিকেল বোর্ড গঠন করাসহ যাবতীয় বন্দোবস্ত করেন।
জিডিতে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় তার কোনো দোষ না থাকায় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেয়নি, গাড়িও আটক করেনি। অহেতুক হয়রানি, অপপ্রচার, মিথ্যা মামলা, মানসিক নির্যাতন, অর্থের জন্য চাপ দেওয়াসহ নানা আশঙ্কা থেকে প্রকৃত বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য তদন্তের অনুরোধ জানান তিনি।
বনানী থানার ওসি জানান, সাঈদ হাসান দুর্ঘটনার বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) একটি জিডি করেন। এ ঘটনায় সার্জেন্ট মহুয়া বাদী হয়েও একটি মামলা করেছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন