দেশে এ বছর অতি বৃষ্টি ও পাঁচ-ছয় দফা বন্যায় ৩৫টি জেলার আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। বরং আগামী জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।
সারা বছরের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) গত একমাস ধরে দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলে জরিপ করে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন।
ফলে সারা দেশে চালের উৎপাদন কম এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কার কথা যেভাবে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে তা আদৌ ঠিক নয় বলে দাবী করেছেন গবেষকরা।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের নেতৃত্বে ব্রি’র কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ৫ জন বিজ্ঞানী সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ টিম এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ব্রি’র কৃষি অর্থনীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উক্ত গবেষণায় বাংলাদেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চল হতে সর্বমোট ১ হাজার ৮০০ জন কৃষকের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ৫৬ জন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ১১২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট হতে ধানের আবাদ ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উক্ত গবেষণা কাজে সরাসরি এবং টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই কাজে এই প্রথম উৎপাদন নির্ণয়ের জন্য স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে আমন ধানের আবাদকৃত এলাকার তথ্য বের করা হয়েছে।
গবেষণার ফল থেকে দেখা যায়, যখন কোন একটি বছর দেশের বন্যায় আক্রান্ত এলাকা ২২ শতাংশের উপরে যায় তখন ধানের উৎপাদন প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ৭০টন হারে কমে যায়। অপরদিকে যদি বন্যা আক্রান্ত এলাকা ২২% এর কম থাকে তবে পরবর্তী মওসুমে উৎপাদন প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ৪৯০ টন হারে বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, যে বছরগুলোতে বন্যা আক্রান্ত হয়েছিল তার পরবর্তী বছরে ধানের উৎপাদন বিভিন্নহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃদ্ধির পেছনে বন্যা পরবর্তী বছরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ এবং ধানের বাড়তি দাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
চালের হিসাবে এবছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদন হবে ৩৭.৪২ মিলিয়ন টন। চাহিদা ও যোগানের অবস্থা বিশ্লেষণে দেখাযায় যে, ডিসেম্বর ২০২০ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত আভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা মিটিয়ে ব্রি’র হিসেবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্ধৃত্ত থাকবে।
এক্ষেত্রে মাথাপিছু দৈনিক ৪০৫ গ্রাম চাল ধরে সর্বমোট ১৬৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য এই হিসেব করা হয়েছে। এছাড়াও মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ২৬ ভাগ নন-হিউম্যান কনসাম্পশনের বাৎসরিক চাহিদা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
তবে আগামী বোরো আবাদ নির্বিঘ্ন করতে উল্লিখিত বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় বীজ, চারা ও সারসহ সকল উপকরণ যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রি, বিএডিডিসি, ডিএই’কে সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কৃষকদের জন্য ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর