মাহমুদুর রহমান মান্নার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে নাগরিক ঐক্য। এতে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৬ জানুয়ারি কারাবন্দি মান্না হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সংবাদ পেয়ে তার স্ত্রী রবিবার কারাফটকে গিয়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। আটক স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিনুর আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বনানীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। ১৮ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর তাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করার পর ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। দুই মামলায় ২০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে মান্নাকে নির্যাতনের ফলে ১৩ দিন পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সুচিকিৎসার সুপারিশ উপেক্ষা করে তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে রিমান্ডের অজুহাতে এ পর্যন্ত জামিনের আবেদন করা যায়নি। এভাবে ১১ মাস পার হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডাকসুর দুবারের ভিপি, সফল ছাত্রনেতা এবং তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির অগ্রসৈনিক কারাবন্দী মান্নার ডিভিশন আবেদনও উপেক্ষিত হয়েছে। এতে তাকে অসুস্থ অবস্থায় মেঝেতে মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তার যে সুচিকিৎসা হচ্ছে না, হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হওয়ায় তার প্রমাণ। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বিনা বিচারে আটক অবস্থা থেকে তার মুক্তির দাবিও জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার, ওহিদুজ্জমান, আতিক রহমান ও ইসলামউদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান মান্না। পরে কারাগারেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, হাইপ্রেসারের কারণে মান্নাকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। হঠাৎ তার প্রেসার কমে যাওয়ায় সেলের ভিতর পড়ে যান তিনি। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আলম জানান, মান্না মাথা ঘুরে পড়ে যাননি। প্রেসার কমে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি সুস্থ। মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মান্না শনিবার অসুস্থ হলেও আমাদের জানানো হয়েছে রবিবার সকালে। কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি এখন সুস্থ আছেন। প্রেসার কমে যাওয়ায় তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন।’ মেহের নিগার আরও বলেন, ‘জেল কর্তৃপক্ষ যতটুকু বলেছে, এর চেয়ে বেশি আমরা জানতে পারছি না।’
পারিবারিক ও নাগরিক ঐক্য সূত্র জানায়, অযত্ন-অবহেলায় সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে সাত নম্বর সেলে অসহায় দিনযাপন করছেন মান্না। কারাগারে ডিভিশনও দেওয়া হয়নি ডাকসুর সাবেক এই ভিপিকে। গ্রেফতারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঘাড় ব্যথা ও পেইনের জন্য মান্নাকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হতো। যেতে হতো ফিজিওথেরাপি নিতে। কিন্তু সবই এখন বন্ধ। আরও আছে হার্টে চারটি ব্লক, পেটের সমস্যা। এ ছাড়া ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় চোখে স্প্লিন্টার লাগায় তাকে লেন্স ব্যবহার করতে হয়। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ফোনালাপের পর রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে পুলিশি হেফাজত, রিমান্ড, কারাগার, কখনো হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটে মান্নার। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিমান্ডে নেওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন মান্না। এদিকে শীতের কারণে মান্নার কষ্ট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, কিছুদিন আগে মেঝের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য কিছু কার্টন পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও লাভ হয়নি। একটি সাধারণ মানের কম্বল দিয়েই শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়েছে মান্নাকে। মান্নার সব ওষুধ, খাবার নিয়মিত দিয়ে আসতে হচ্ছে কারাগারে গিয়ে। কিন্তু এতেও মান্না সুস্থ নন। তার জন্য উন্নত চিকিৎসা দরকার, যেটা কারাগারে থেকে গ্রহণ সম্ভব নয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা