নারায়ণগঞ্জে দুই শিশুসহ পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যার পেছনে টাকা-পয়সা লেনদেন ছাড়াও যৌন সম্পর্কের বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে মামলার অভিযোগসূত্রে জানা গেছে।
নিহত তাসলিমা বেগমের স্বামী মো. শফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে লামিয়া আক্তার নামের গৃহবধূকে অনৈতিক যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে মামলায় ১২ লাখ টাকা ঋণের জের ধরেও হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে নিহত তাসলিমা বেগমের স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। নিহত ৫ জন হলেন- তাসলিমা (৪০), তাসলিমার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ভাই মোরশেদুল (২৫), তাসলিমার দেবর শরীফের স্ত্রী লামিয়া (২৫)।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মালেক জানান, এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ''আমার স্ত্রী তাসলিমা (২৮), মেয়ে সুমাইয়া (৪), ছেলে শান্ত (১০), ছোট ভাই শরীফ (২২) ও তার স্ত্রী লামিয়া (২০), শ্যালক মোরশেদুল ওরফে মোশাররফ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন।''
মামলায় বলা হয়, ''১০ বছর ধরে আমি (শফিকুল) ঢাকার জনৈক জিয়ারুল হাসান এর গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আমি নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলের বাসায় আসতাম। তবে গত শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমার ছোট ভাই শরীফ আমার মোবাইলে ফোন করে অবহিত করে যে, কে বা কারা আমাদের বাবুরাইলের ফ্ল্যাটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। পরে আমরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দু'টি কক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনের মৃতদেহ দেখতে পাই।''
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ''আমি পরস্পর জানতে পারি যে, আমার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহাজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২ লাখ টাকা পেতেন যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেওয়া ছিল। ওই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায়ই টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিতেন। এমনকি নাজমাও মাঝে মধ্যে আমার পরিবার ও সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করতেন। আমার শ্যালক মোরশেদুল ওরফে মোশাররফের কাছেও টাকা পেতেন তারা। টাকা-পয়সা পাওয়ার সুবাধে পাওনাদার ব্যক্তিরা আমার বাসায় যাওয়া-আসা করতেন এবং এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতেন।''
''এছাড়া আমার ভাগিনা মাহফুজ আমার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবাসের সময়ে যৌন আবেদন করলে পরবর্তীতে মাহফুজকে আমরা ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জ চলে আসি। ভাগিনা মাহফুজ পুনরায় নারায়ণগঞ্জে আমাদের বাসায় এসে শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার ও আচরণ করতো। এতে আমার ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া অসন্তুষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তাসলিমা ও ছোট ভাই শরীফের কাছে লামিয়া বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়। এতে করে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, ওই ব্যক্তিসহ (মাহফুজ) অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা একই উদ্দেশ্যে পরস্পরের যোগসাজশে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টা থেকে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যে কোনো সময়ে শক্ত কোনো ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করেছে।''
বিডি-প্রতিদিন/১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/এস আহমেদ