চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচন এবার প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই প্রস্তুতি নিয়েই নির্বাচন করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিনসহ দলের নেতা-কর্মীরা ইভিএম ভোটেই বিশ্বাস বা সমর্থন দিলেও আস্থা নেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবু সুফিয়ানসহ দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের। সবমিলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীসহ সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ইভিএমেই হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইভিএমের ওপর সাধারণ মানুষের কোনও আস্থা নেই। এবার নির্বাচন কমিশনকে ইভিএমের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে। ইভিএম বিষয়ে যারা জ্ঞান রাখেন তারা ইতিমধ্যেই এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ইভিএম’এ কোন পেপার ট্রেইল নেই। কারণ আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। এবারও তারা ইভিএম মেশিনে ভোট চুরি করে জয়ী হতে চেষ্টা করবে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সে জন্য নির্বাচনের আগে ইভিএমর স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কিভাবে ভোট হবে সেটা সম্পন্ন নির্বাচন কমিশনের। সেই নির্বাচন কমিশনের নিয়মেই কাজ করছি। ইভিএম ভোট পদ্ধতিতে সবখানেই ভোট হচ্ছে, এটি একটি আধুনিক পদ্ধতি। এটি কারচুপি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এসব নিয়ে তো কোন ধরণের অনিয়ম বা অভিযোগ হয়নি। তবে বিএনপি এখন সুষ্টু ও সুন্দর একটা পরিবেশে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটের সিষ্টেমকে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য একটা পায়তারা জানাচ্ছেন। এসব বিষয়ে জনগণ সচেতন রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বিএনপির প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না? গত নির্বাচনে মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি এবার মানুষ সে ধরণের ভোট চাই না। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য জনগণ অপেক্ষা করছেন। যেখানেই গণসংযোগে যাচ্ছি সেখানেই মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন খান বলেন, প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের ৮ আসনের সংসদীয় উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) পদ্বতিতে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এসব বিষয়ে নানা প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস সূত্র জানা যায়, বোয়ালখালীর ৯টি পৌরসভা-ইউনিয়ন এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৬ জন। বোয়ালখালীর তুলনায় চট্টগ্রাম শহরাঞ্চলেই ভোটার সংখ্যা বেশি। একইভাবে ভোটকেন্দ্রও বেশি চসিকের পাঁচ ওয়ার্ডে। বোয়ালখালীর এক পৌরসভা ও আট ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা এক লক্ষ ৬৪ হাজার ১৩১ জন। অন্যদিকে পাঁচ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা তিন লক্ষ ১১ হাজার ৮৬৫জন। মোট ১৭০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে চসিকের পাঁচ ওয়ার্ডেই আছে ১০১টি কেন্দ্র। ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের এমন হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে পাঁচ ওয়ার্ডের ভোটাররাই ফ্যাক্টর হতে পারে।
প্রসঙ্গতঃ গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল। আগামী ১৩ জানুয়ারি এই আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন