‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চরণের মতোই অবস্থা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের। তিনি আর নির্বাচন করবেন না, চলে যাবেন অবসরে। তবে তার কর্মজীবনের গল্পটি অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে কিছু কাজ শেষ করে যেতে না পারায়।
তিনি শুধু সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য নন, সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ এক দশক। এই এক দশকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চেহারায় পরিবর্তন আসলেও, নিজের এলাকার উন্নয়নে তার সঙ্গী হচ্ছে আক্ষেপ আর হতাশা। সিলেটকে উন্নয়নের অলংকারে সাজাতে তার যে প্রচেষ্টা ছিল, তা পূর্ণতা পায়নি সংশ্লিষ্টদের অমনোযোগিতায়।
গত সোমবার (১ অক্টোবর) সিলেটের বিভিন্ন সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি জানতে পারেন, তার শুরু করা অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি কিংবা দ্রুত সমাপ্ত হবে। আগামী ছয় মাস কিংবা এক বছরের মধ্যেও যে শেষ হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না কেউ। এরকম জবাবের পাশাপাশি শুনলেন আরও অভিযোগ, যেগুলোর সঠিক জবাব কারো জানা নেই।
সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এটিই ছিল তার শেষ বৈঠক। শেষ বৈঠকে উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির এরকম দূর্গতি শুনতে তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই সে সভায় তিনি কখনো রেগেছেন কারো প্রতি আবার শাসিয়েছেনও কাউকে।
তবে পুরনো কারাগার স্থানান্তর নিয়ে অর্থমন্ত্রী শেষ মূহুর্তে এসে যে কথা জানালেন, তা শুনতে প্রস্তুত ছিলেন সিলেটের উন্নয়নকামীরা। পুরাতন কারাগার স্থানান্তর শেষে সেখানে হবে একটি ‘মুক্ত উদ্যান’-সেই আশায় বুক বাধা লোকদের হতাশ করে সভায় তিনি জানালেন- বর্তমান কারাগার আপাতত যেমন আছে তেমনই থাকবে।
বিদ্যুৎখাতে সরকারের ঐতিহাসিক সাফল্যের পরও তাকে শুনতে হয়েছে সিলেট শহরতলীতে প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টার মতো লোডশেডিংয়ের অদ্ভুতুড়ে অভিযোগের কথা। এছাড়াও যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও যে সিলেট পিছিয়ে তার উপলব্দি হয়েছে শেষ বৈঠকে। নিজ নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রকল্প শেষ করতে এখনো অর্থ, সময় আর পরিকল্পনার প্রয়োজন শুনে অর্থমন্ত্রী কর্মজীবনের অপূর্ণতার ঝুলি আওড়ালেন সেটা বুঝা গেছে বৈঠকে তার অভিব্যক্তিতে।
একটি ছোট্ট শহর আর একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে দশটি বছর অনেক বেশি সময়ই ছিল। সেই সময়টাতে হয়তো তিনি চেষ্টা করে গেছেন তার পরিকল্পনাকে সাজিয়ে নিতে, কিন্তু হয়তো তা হয়নি কারো দোষে কারো অমনোযোগিতায়।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম