বাংলাদেশের স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক উৎস থেকে আহরণ করা মাছের পনের শতাংশ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই লোকসান হয়। মাছ ধরার অনুপযুক্ত পদ্ধতি, দুর্বল সরঞ্জাম, অনুপযুক্ত পরিচালনা এবং সংরক্ষণ সুবিধার অভাবসহ দশটি কারণে এ ক্ষতি হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রযুক্তিগত সহায়তায় মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
সামুদ্রিক ও অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ পরবর্তী মাছের লোকসান মূল্যায়ন এবং উভয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতির দিকসমূহ নির্ণয় করতেই এ গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালনা করা হয়। বুধবার রাজধানীর খামারবাড়িস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশের মৎস্য খাতে ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে পরিচালিত এ প্রকল্পের সমাপ্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় গবেষণাকর্মটির নানান বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এফএও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণাকর্মটির বিষয়গুলো আলোকপাত করতে গিয়ে রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, ‘সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাতে খাদ্য অপচয় ও বর্জ্য হ্রাস করা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণাটিতে ক্ষতির যে অগ্রহণযোগ্য মাত্রা (১৫শতাংশ) পাওয়া গেছে তা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, মানুষের জীবিকা ও সেইসাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়ীত্বের জন্য জাতীয় হুমকিস্বরূপ।’
বক্তারা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণের প্রায় ১৭ শতাংশই মাছ থেকে আসে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা আগামীদিনে মাছের উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জ করবে। এজন্য দরকার টেকসই মৎস্যসম্পদ যা খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাছ চাষ থেকে শুরু করে আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও বিতরণ পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপে মাছের শারীরিক ক্ষতি এ খাতের বড় লোকসান। এতে গুণগতমান হ্রাসের ফলে মাছ কম দামে বিক্রি করতে হয়। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা না করে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আহরণ পরবর্তী মাছের ক্ষতি নিরসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক