'সিনিয়র ভাইয়েরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেভাবে হুমকি দিতে থাকে তাতে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানো হলে আবার নতুন করে শুরু হয় নির্যাতনের পালা।' কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের আতঙ্কিত কয়েকজন নবীন ছাত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরো বলেন, ‘আমাদেরকে রাতের বেলা মোটেও ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়না। উপরন্তু সারারাত একের পর এক অবর্ণনীয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এখন সবকিছুই অসহ্য লাগছে’।
শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল নয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকা সত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আবাসিক হলগুলোতে চলছে নিরব র্যাগিং। হলের গণরুমগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর দাপট দেখাচ্ছেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ছাড়ছেন হল। নিরাপরাধ এসব শিক্ষার্থীরা প্রশাসনে কাছে অভিযোগ দিতেও পাচ্ছেন ভয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে শরীফুল ইসলাম অনীক (রসায়ন বিভাগ) নামের এক নবীন শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলের কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রলীগ কর্মী গণরুমের শতাধিক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে র্যাগ দিতে থাকেন। এসময় হঠাৎ করেই অনীক আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার সহপাঠিরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। এর আগে একই হলে শুক্রবার রাতে নবীন শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চনার শিকার হন ঐ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুর রহমান।
অন্যদিকে গত ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর দিনে নবীন শিক্ষার্থীদেরকে র্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের কিছু ছাত্রকে প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে উঠবস করান। এদিকে র্যাগিংয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আবাসিক হলগুলো থেকে বেশ কিছু নবীন শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে হল ত্যাগ করেছেন বলেও জানা গেছে।
র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রফ্রন্টের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সোমবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে র্যাগিং বন্ধে অবিলম্বে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, অন্যান্য যে কোন বছরের তুলনায় এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে অনেক তৎপর। কারো বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়াও তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ মার্চ ১৬/ সালাহ উদ্দীন